কন্দাল জাতের লতিকচু চাষে মেহেরপুরের কৃষক লাভবান

মেহেরপুরে এবার প্রথম কন্দালজাতের লতিকচু চাষ হয়েছে। মেহেরপুর জেলা শহরের উপকন্ঠে দিঘিরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়া (৫০)। এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়ে গৃহিনী। ছেলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। চাষাবাদ করেই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বাবু মিয়া চাষাবাদ ছাড়া কিছুই বোঝেন না। বিঘা তিনেক জমি আছে চাষাবাদের। এর মধ্যে ২৪ কাঠা জমি স্যাতস্যাতে হওয়ায় ধান চাষ করলে ধানে নোনা লেগে যায়। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার তিনি কন্দাল জাতের লতি কচু চাষ করেছেন ঐ ২৪ কাঠা জমিতে।

ফুেলর সুস্বাদু সবজি হিসেবে দেশজুড়ে কচুর চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে কচু বিক্রি করেছেন ১ লাখ কুড়ি হাজার টাকার। আশা করছেন এখনও লক্ষাধিক টাকার বেচা কেনা হবে। ৫ হাজার টাকার চারা বিক্রি করেছেন বীজ হিসেবে রোপণের জন্য। তাঁর দেখাদেখি ওই গ্রামের অনেকেই কন্দাল কচু চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। মেহেরপুর জেলায় এবার প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে লতি কচুর চাষ হচ্ছে। একমাত্র বাবু মিয়া এ বছর কন্দাল জাতের লতিকচু চাষ করছেন।

কৃষি নির্ভর কচুর জন্য দেশজুড়ে সুখ্যাতি আছে মেহেরপুর জেলার লতিরাজের। তবে, বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়নি কন্দাল জাতের লতি কচুর। জেলায় এবছর প্রথম কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ করেছেন বাবু মিয়া। কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনেক কৃষক লতিরাজ কচু চাষ করছেন গত দু’তিন বছর ধরে। তারা লাভবান হওয়াতে জেলায় লতিরাজ কচু চাষ বাড়ছে। এবার বাড়বে কন্দালজাতের লতিকচু চাষ।

কন্দাল জাতের লতি কচু চাষি বাবু মিয়া জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি এ বছর ২৪ কাঠা জমিতে কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ করেন। সার ও বীজ কৃষি অফিস থেকেই দেয়। শীতের শেষে জমিতে বীজ লাগাই। লাগানোর তিন মাস পর থেকেই লতিকচু তোলা শুরু করি। ক্ষেত থেকে দুই সপ্তাহ পর পর কচুর লতি তোলা হয়। আর এক মাস পর পর কচুর ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। চার থেকে পাঁচ মাস পর কচুর কন্দ তোলা হয়। কন্দাল জাতের লতিকচু হওয়ায় জমিতে সবসময় পানি দিয়ে স্যাসস্যাতে করে রাখতে হয়। কৃষি বিভাগ বীজ, সার দিলেও পরিচর্যা করতে তার ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান। তিনি জানান- এ পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার টাকার লতি, ১৫ হাজার টাকার ফুল, ৫ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করেছেন। এখনও বেচাকেনা করতে পারবেন ১ লাখের বেশি। তিনি জানান এ বছর চাষ করবেন ২ বিঘা জমিতে।

গোলাম হোসেন (৪৫) নামের এক চাষি জানান- লতি, মুখী (ছড়া), ফুলসহ কয়েক ধরনের সবজি পাওয়া যায়, কচু একবার লাগালেই। আর এসবের চাহিদাও ভালো বাজারে। বাবু মিয়া জমিতে লতিকচু ফলিয়েছেন কৃষি বিভাগের পরামর্শে। এখন গোলাম হোসেনও ১ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন, তার দেখাদেখি।

সবজি বিক্রেতা খলিলুর রহমান জানান- উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় এবং ফুল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এ ছাড়া একেকটি কন্দাল কচু ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

লতি কচুর পাইকারী ক্রেতা মেহেরপুর জেলা শহরের আড়ৎদার শাহি, রাজ্জাক, ইনতাজ আলী অভিন্নসুরে বলেন, লতি কচু উন্নত মানের সবজি হওয়ায় ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গাজীপুর চৌরাস্তা, সাভার, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, জয়দেবপুর চৌরাস্তাসহ সিলেট ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। এবার নতুন করে কন্দাল জাতের লতিকচু চাষ হয়েছে। চাহিদাও ব্যাপক।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভিন জানান- মেহেরপুররে লতিরাজ কচু চাষ হলেও কন্দাল ফসল লতি কচু চাষ হয় না বললেই চলে। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম মেহেরপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সহযোগিতায় কৃষক বাবু মিয়া লতিকচু চাষ করছেন। লতিকচু চাষে এ সাফল্য অনেক কৃষককে অনুপ্রাণিত করেছে। শুধুমাত্র নিচু জমিতেই নয়, পুষ্টিচাহিদা পূরণ করা সম্ভব, বসতবাড়ির আশেপাশে স্যাতস্যাতে জমিতে সহজেই লতিকচু চাষ করে। ভবিষ্যৎতে মেহেরপুরের লতিকচু, দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, লতিকচু ও কন্দাল জাতের লতিকচু একই হলেও কন্দাল জাতে ফলন বেশি। কন্দাল জাতের লতিকচু ঘণ করে লাগাতে হয় এবং জমিতে পানি সংরক্ষণ রাখা প্রয়োজন সবসময়। যাতে ফুল ও লতি বেশী হয়। কারণ উৎকৃষ্ট সবজি হিসেবে বিক্রি হয় লতি ও ফুল।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*