রংপুর অঞ্চলে পরীক্ষামুলক চাষেই দারুন ফলন বঙ্গবন্ধু ১০০ ধানে

নতুন উদ্ভাবিত ‘বঙ্গবন্ধু-১০০’ধানের পরীক্ষামুলক চাষে প্রথমবারেই সাফল্য পাওয়া গেছে রংপুর অঞ্চলে। কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।

চলতি বছর রংপুর অঞ্চলের চার জেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে প্রদর্শনী প্লট স্থাপনের মাধ্যমে এই ধানের চাষ করা হয়। পরীক্ষা্মুলক চাষে ভালো ফলন হওয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠছেন স্থানীয় কৃষক এবং কৃষি বিভাগ । সম্প্রতি এসব ধান জমি থেকে কেটে মাড়াই করা হয়েছে।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের কর্মকর্তা বলছেন, রংপুর অঞ্চলে এবার ‘বঙ্গবন্ধু-১০০’ ধান ৩০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। এর মধ্যে রংপুরে ৮ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১৬, লালমনিরহাটে ৫, নীলফামারীতে ১ হেক্টর রয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রংপুর অফিসের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান রকিবুল হাসান জানান, ‘এই ধান উদ্ভাবনের পর সরকারি অনুমোদন পাওয়া যায়। সেই অনুমোদন পাই ২০২১ সালে। এরপর এটি রিলিজের পর দেশের প্রথম রংপুর অঞ্চলে চাষ করা হয়।

নতুন এই ধান বীজ রোপণ থেকে ধান কাটা পর্যন্ত ১৪৫ দিনে কৃষকরা ঘরে ধান তুলতে পারবেন। ধানটি উচ্চ ফলনশীল। প্রতি হেক্টর জমিতে সাড়ে ৭ থেকে ৮ টন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ধানের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ব্লাস্ট রোগ হবে না। বিভিন্ন রোগের উপদ্রব কম হয়। এ ধানের চালের আকৃতি মাঝারি চিকন, প্রতি কেজি চালে ২৫ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম জিংক ছাড়াও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং খেতে সুস্বাদু।’

ঐ কর্মকর্তা জানান, ‘বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানের ভালো ফলন হওয়ায় আমরা আশাবাদী হয়ে উঠছি। এই ধান চাষে কৃষকরা সহজে লাভবান হতে পারবেন।’
গঙ্গাচড়া সদর উপজেলার কৃষক আলা মিয়া বলেন, ‘আমার ৩৩ শতাংশ জমিতে একটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছিল। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি যে, এত ভালো উৎপাদন হয়। এ ছাড়া কীটনাশক একইবারে কম দিতে হয়েছে।’

পাগলাপীরের হরকলি এলাকার কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘৩৩ শতকে প্রায় ২২ মণ ধান হয়েছে। এই জমিতে অন্য ধান এত আবাদ হতো না।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার অর্জুনডারা এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এক একর জমিতে বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধান আবাদ করেছি। ধান ক্ষেতে কোনো রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে।’
রাজা
‘আগোত যদি ১৭ থাকি ১৮ মণ হয়, এই ধান হইসে ২৩ থাকি ২৪ মণ। তো এটা ভালো নোয়ায়, অনেক ভালো। তা ছাড়া খরচ একটু কম। ওষুধ কম দেওয়া লাগে।’

রংপুর সদরের পাগলাপির এলাকার দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিজুষ চন্দ্র মহন্ত বলেন, ‘চাষিরা ৩৫ দিনের চারা জমিতে রোপণ করতে পারবে, জমি তৈরির শেষ চাষে সার প্রয়োগ করবে। আগাছা দমন করতে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে। এরপর ১৫ দিনের মধ্যে প্রথম কিস্তির ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।

‘পরে আবার ১৫ দিনের মধ্যে আগাছা দমন করতে হবে। রোগবালাই না থাকায় তেমন কোনো ওষুধ প্রয়োগ করতে হয় না।’
সম্প্রতি দিনাজপুরের বিরলে ‘বঙ্গবন্ধু-১০০’ এর ধান ক্ষেত ও বীজ প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সদস্য ও পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, “মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং উচ্চ ফলনশীল ‘ব্রি-১০০’ উদ্ভাবিত নতুন এ ধান জাতের নাম রাখা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু-১০০’। চলতি বছর ‘বঙ্গবন্ধু-১০০’ ধানের ১৬০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। আগামী দিনে ১০ হাজার মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন করা হবে। পাশাপাশি ধানটি চিকন ও এর ভাত সুস্বাদু হওয়ায় এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করবে বলে আমরা ধারণা করছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক এমদাদ হোসেন শেখ বলেন, ‘জিংক সমৃদ্ধ এই ধানের উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। এবারই প্রথম রংপুর বিভাগে এই ধানের চাষ করা হয়েছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*